ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
কৃষি উদ্যোগ
শসা চাষে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের চাষি মোজাম্মেল হক শসা চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য ২০০৮ সালে তিনি মাদারগঞ্জের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুলফিকার হায়দারের পরামর্শে মির্জাপুর গ্রামের ৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে হাইব্রিড শসা আবাদ শুরু করেন। সেই শসা চাষ থেকে ওই বছর উৎপাদন খরচ ছাড়াই তিনি ৩ লাখ টাকা আয় করেন। আর তখন থেকেই তার বেকারত্ব ঘুচে যায় এবং পরবর্তী সময়ে শসা চাষেই তিনি তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলেন। 



মোজাম্মেল হক জানান, হাইব্রিড জাতের শসা বছরে ৩ বার আবাদ করা যায়। তিনি ২০০৯ সাল থেকে শসার আবাদ বৃদ্ধি করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে মোট ১৫ বার ১০ বিঘা জমিতে ওই শসার চাষ করেন। এ শসা চাষের সময় হচ্ছে, জৈষ্ঠ্য মাসের ১০ তারিখ থেকে শ্রাবণ মাসের ১৫-২০ তারিখ পর্যন্ত। ভাদ্র মাসের ১০ তারিখ থেকে কার্তিক মাসের ১৫-২০ তারিখ পর্যন্ত এবং মাঘ মাসের ১০ তারিখ থেকে চৈত্র মাসের ১৫-২০ তারিখ পর্যন্ত। এই সবজি চাষের সময়কাল ৬৫-৭০ দিন এবং বীজ বপন করার ৩৫ দিন পরে ফলন আসতে থাকে। একটানা ১০ বার তিন দিন পরপর ক্ষেত থেকে শসা উঠানো যায়। চাষি মোজাম্মেল হক বছরে ৩ বার করে পাঁচ বছরে মোট ১৫ বার ১০ বিঘা জমিতে শসা আবাদ করে উৎপাদন খরচ ছাড়াই বিঘাপ্রতি ৫ লাখ টাকা করে মোট ৭৫ লাখ টাকা লাভ করেন। এতে গত ছয় বছরে তার লাভের অঙ্ক দাঁড়ায় মোট ৭৮ লাখ টাকা।
এক বিঘা জমিতে শসা চাষে মোট খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। ফলন আসে কমপক্ষে ২৪৫ মণ। আর ১০ বিঘা জমিতে মোট ফলন আসে ২ হাজার ৪৫০ মণ। তার উৎপাদিত এই বিপুল পরিমাণ শসা স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করা সম্ভব হয়নি। তাই তিনি ঢাকার কারওয়ান বাজারে এই শসা বিক্রির ব্যবস্থা করেন। পাকা রাস্তা থেকে তার শসা ক্ষেত ৩ কিলোমিটার দূরে। তাই তিনি ক্ষেত থেকে শসা তুলে প্রথমে ঘোড়ার গাড়ির সাহায্যে স্থানীয় মিতালী বাজারে নিয়ে জমা করেন। তারপর ট্রাকে করে কারওয়ান বাজারে পাঠানো হয় বিক্রির জন্য। এতে ১০ বিঘা জমির শসার জন্য আবাদ ও পরিবহনসহ মোট খরচ হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর মণপ্রতি শসা গড়ে বিক্রি হয় ৪০০ টাকা। ২ হাজার ৪৫০ মণ শসার বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। নীট লাভ হয় ৫ লাখ টাকা। এইভাবে মোজাম্মেল হক ১৫ বার শসা চাষে ৭৫ লাখ টাকা নীট লাভ করেন। ছয় বছরের নীট লাভের টাকা থেকে তিনি ৪৮ লাখ টাকায় ৮ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন এবং ১৬ লাখ টাকায় ৩০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন। এ ছাড়াও ৫ লাখ টাকা দিয়ে নতুন ঘরবাড়ি তৈরি করেছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, চাষি মোজাম্মেল হক কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে জৈষ্ঠ্য-শ্রাবণ সময়কালের শসা চাষ থেকে শেষবারের মতো শসা তুলছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শসা চাষ তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। তিনি ভূমিহীন বেকার মানুষ থেকে আজ সচ্ছল কৃষকে পরিণত হয়েছেন। তিনি তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে এখন সুখেই দিন যাপন করছেন। তিনি আশা করেন, অদূর ভবিষ্যতে একটি গরুর খামার গড়ে তুলবেন এবং প্রচুর পরিমাণ দুধ উৎপাদন করে এলাকার মানুষের দুধের অভাব দূর করবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, শসা চাষে মোজাম্মেলের এ অভাবনীয় সাফল্য ও আর্থিক উন্নতি দেখে মির্জাপুর গ্রামের প্রায় ২০০ প্রান্তিক চাষি এই সবজি চাষে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হয়ে কয়েক বছরে সচ্ছল কৃষকে পরিণত হয়েছে। আর শসা চাষে মির্জাপুর এলাকার ২০০ প্রান্তিক চাষি স্বাবলম্বী হওয়ার কৃতিত্ব মির্জাপুরের সর্বপ্রথম সফল শসা চাষি মোজাম্মেল হকের। তাই  মির্জাপুর এলাকার শসা চাষিরাও এখন মোজাম্মেল হককে শসা চাষের গুরু হিসেবেই সম্মান করেন।
সূত্র: এগ্রি নিউজ