ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
ব্যবসা ও শিল্প
সেলাই এবং এমব্রয়ডারি বা সূচী শিল্প

আধুনিক জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সৌখিন নারী-পুরুষেরা বর্তমানে বিভিন্ন নকশা করা পোশাক পরার প্রতি আগ্রহী। পোশাককে আরও সুন্দর, বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য আবহমানকাল থেকে নকশা করার প্রচলন চলে আসছে। কাপড়ে নকশা করার কাজটি বিভিন্নভাবে করা হয়। তার মধ্যে সুঁই সুতার সাহায্যে হাতের সেলাই ও মেশিনের সাহায্যে এমব্রয়ডারি নকশা করা এর মধ্যে অন্যতম। নতুন নতুন নকশার মাধ্যমে অতি সাধারণ এবং স্বল্প মূল্যের পোশাকও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। অতীতে এদেশের মেয়েরা তাদের অবসর সময় সেলাই করে কাটাতো। তাদের সেলাইয়ের প্রতিটি ফোঁড়ে ফুটে উঠত তাদের সুখ, হাসি, কান্না জীবনের কাহিনী। শহরের চেয়ে গ্রামের মেয়েরাই এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তবে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও দেশের বাইরে সূচী শিল্পের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক নারী-পুরুষ এ পেশার সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে। কাপড় সেলাই এবং এমব্রয়ডারির ব্যবসা করে বেকার নারী-পুরুষ নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে।

বাজার সম্ভাবনা 

অর্ডার অনুযায়ী কাপড় সেলাই ও এমব্রয়ডারি করে তার বিনিময়ে মজুরি নিয়ে আয় করা যায়। এর পাশাপাশি সূচী কাজ বা এমব্রয়ডারি করা বিভিন্ন পোশাক বিক্রি করা যায়। এছাড়া শহরে অবস্থিত তৈরি পোশাক বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান এবং কারু ও হস্ত শিল্পের বিপণীগুলোর সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে তৈরি পোশাক বিক্রি করা সম্ভব।

মূলধন 

কাপড় সেলাই এবং এমব্রয়ডারির জন্য স্থায়ী উপকরণ কিনতে আনুমানিক ১৫৬৯৮ থেকে ১৭০৩০ টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে ৬ সেট সালোয়ার কামিজ সেলাই ও এমব্রয়ডারির কাঁচামাল কিনতে ৩৩৫ থেকে ৩৯৫ টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া দোকানঘর ভাড়া নেওয়ার জন্য আলাদা আরও কিছু টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ 

সূঁচ ও সুতার সাহায্যে হাতের মাধ্যমে কাপড়ে নকশা তোলার কাজ অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে শিখে নেওয়া যায়। তবে মেশিনের সাহায্যে এমব্রয়ডারির জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া আবশ্যক। বিসিক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমব্রয়ডারির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব।

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান 

*
স্থায়ী উপকরণ 

উপকরণ 
পরিমাণ 
আনুমানিক মূল্য (টাকা) 
প্রাপ্তিস্থান 
এমব্রয়ডারি মেশিন
১টি
১১০০০-১২০০০
সেলাই মেশিন বিক্রয়ের শোরুম
সেলাই মেশিন (পা চালিত)
১টি
৪৫০০-৪৮০০
সেলাই মেশিন বিক্রয়ের শোরুম
কাঁচি
১টি
৯০-১০০
সুতা বোতামের দোকান
ফ্রেম
১টি
১০০-১২০
সুতা বোতামের দোকান
সুচ
৬টি
৮-১০
সুতা বোতামের দোকান
মোট=১৫৬৯৮-১৭০৩০
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

কাঁচামাল (৬ সেট সালোয়ার কামিজ এমব্রয়ডারির জন্য)

উপকরণ 
পরিমাণ 
আনুমানিক মূল্য (টাকা) 
প্রাপ্তিস্থান 
নানা রঙের সুতা
প্রয়োজন মতো
৩০০-৩৫০
সেলাই মেশিন বিক্রয়ের শোরুম
কার্বন পেপার
৪টি
২০-২২
স্টেশনারি দোকান
রঙিন চক
১টি
৫-৭
সুতা বোতামের দোকান
পেন্সিল
১টি
৫-৮
স্টেশনারি দোকান
কলম
১টি
৫-৮
স্টেশনারি দোকান
মোট=৩৩৫-৩৯৫ টাকা 
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

এমব্রয়ডারি করার কাপড় 

শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, সালোয়ার কামিজ, ফ্রক, পাঞ্জাবী, শার্ট, গেঞ্জি, ওড়না, বাচ্চাদের পোশাক, বেড কভার, টেবিল ক্লথ, টেবিল ম্যাট, রুমাল, কুশন কভার, নকশী কাঁথা এসব ধরণের পোশাক ও নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী এমব্রয়ডারি করে বৈচিত্র্যময় করা যায়। এছাড়া এখন নানা ধরণের সৌখিন দ্রব্যেও এমব্রয়ডারি করা হয়। বিভিন্ন ধরণের নকশা, মানানসই রঙের সুতা এমব্রয়ডারিকে আকর্ষণীয় করে তোলে।

স্থান ভেদে সূচী শিল্প 

সূচী শিল্প বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন ধরণের নকশার প্রচলন আছে। যেমন যশোর এলাকার প্রচলিত বিশেষ ধরণের সূচী শিল্পকে যশোর ষ্টিচ বলা হয়। এর মাধ্যমে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, শাল, বেডশীট, কুশন কভার প্রভৃতি সুন্দর সুন্দর নকশায় সেলাই করা হয়। বাংলাদেশে নানান জায়গায়-যেমন জামালপুর, যশোর, শেরপুরে নকশী কাঁথা হয়। এক একটি নকশী কাঁথা যেন জীবনের গল্প। গ্রামীণ নারীরা তাদের প্রতিদিনের জীবনের প্রতিটি জিনিস সুই এর ফোঁড়ে তুলে ধরে। এছাড়া চেইন, কোচিং, লেইজী, ডেইজী, ক্রস, মাদ্রাজী, গুজরাটি, মণিপুরি, কাশ্মীরী, জামদানী, ইরানী, ভরাট প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের সেলাই করা হয়ে থাকে। যে যার এলাকার বিশেষ ধরণের সেলাই করতে পারে। এছাড়া নতুন নতুন সেলাই শিখে নতুন নতুন নকশায় কাপড় তৈরি করা যেতে পারে।

এমব্রয়ডারি করার নিয়ম 

১. পোশাকের ধরণ ও অন্যান্য সামগ্রীর বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে পছন্দমতো নকশা এঁকে নিতে হবে।
২. তারপর নকশাটিকে বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে সুঁচ-এর সাহায্যে ফুটিয়ে তুলতে হবে।


*
সাবধানতা 

নকশা করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে নকশা যেন নিখুঁত হয়।

আয় ও লাভের পরিমাণ 

*
মোট খরচ 

খরচের ক্ষেত্র 
আনুমানিক মূল্য (টাকা) 
৬ সেট সালোয়ার কামিজ এমব্রয়ডারি করতে কাঁচামাল বাবদ খরচ
৩৩৫-৩৯৫ টাকা
স্থায়ী জিনিসের অবচয় (ক্ষতি) বাবদ খরচ
১০-১৫ টাকা
যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ
১০০-১২০ টাকা
৬ সেট সালোয়ার কামিজ এমব্রয়ডারি করতে মোট খরচ
৪৪৫-৫৩০ টাকা
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

*
আয় ও লাভের পরিমাণ (প্রতি সেট সালোয়ার কামিজের মজুরি ১০০-১১০ টাকা ও প্রতি সেট সালোয়ার কামিজের এমব্রয়ডারির মজুরি ২০০-২২০ টাকা)

৬ সেট সালোয়ার কামিজ সেলাই ও এমব্রয়ডারি মজুরি
১৮০০-১৯৮০ টাকা
৬ সেট সালোয়ার কামিজ তৈরি করতে মোট খরচ
৪৪৫-৫৩০ টাকা
৬ সেট সালোয়ার কামিজ বিক্রয় করে লাভ
১৩৫৫-১৪৫০ টাকা
এছাড়া বিনিয়োগ ও বিক্রয়ের উপর আয় ও লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে। অনেক সময় জিনিস পত্রের দাম উঠানামা করে। তাই এ ক্ষেত্রে হিসাব শুধুমাত্র ধারণা দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, সেপ্টেম্বর ২০০৯।

এমব্রয়ডারি মেশিন কেনার জন্য বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয়। স্থায়ী উপকরণগুলো একবার কিনলে অনেক দিন ধরে ব্যবহার করা যায়। আগ্রহী নারী-পুরুষ যে কেউ কাপড় সেলাই ও এমব্রয়ডারি করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

সচরাচর জিজ্ঞাসা 

প্রশ্ন ১ : এমব্রয়ডারি কি ? 
উত্তর : এমব্রয়ডারি হচ্ছে কাপড়ের উপর নকশা বা বিশেষ কোন ডিজাইন সুচ ও সুতার সাহায্যে ফুটিয়ে তোলা।

প্রশ্ন ২ : এমব্রয়ডারি কিভাবে করা যায় ? 
উত্তর : এমব্রয়ডারি দুইভাবে করা যায়। সুচ ও সুতার সাহায্যে হাত দিয়ে ও মেশিনের সাহায্যে।

প্রশ্ন ৩ : সেলাই ও এমব্রয়ডারি প্রকল্পের জন্য স্থায়ী উপকরণ কিনতে কত টাকার প্রয়োজন ? 
উত্তর : স্থায়ী জিনিস কিনতে আনুমানিক ১৫৬৯৮-১৭০৩০ টাকার প্রয়োজন হবে।