ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
তথ্যাদি
পরিবেশবান্ধব বায়োফানজিসাইড

পরিবেশবান্ধব বায়োফানজিসাইড

প্রতি বছর সারা বিশ্বে গড়ে ৩০ ভাগ ফসল তিগ্রস্ত হয় রোগজীবাণু ও পোকামাকড়ের আক্রমণে। যদিও উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোয় এ হার অনেক বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রচারণা এবংসহজলভ্যতার কারণে কৃষকেরা ফসলে ব্যাপকভাবে রাসায়নিক কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন, যার দরুন সৃষ্টি হয়েছে নানাবিধ জটিলতা।
এসব রাসায়নিক পদার্থ এক দিকে পানি, বায়ু ও মাটি দূষিত করছে, অন্য দিকে উৎপাদিত ফসলের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকে নানা রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। উন্নত বিশ্বে অতি তিকর পেস্টিসাইডগুলো ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষকদের ক্রমাগত নির্বিচারে রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহারের ফলে পোকামাকড়গুলো ধীরে ধীরে কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে পড়ে। আবার রাসায়নিক ছত্রাকনাশক ব্যবহারের ফলে জীবাণুগুলো নতুন রেস তৈরি করছে। ফলে এসব রাসায়নিক পেস্টিসাইড পোকমাকড় ও রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে আর কার্যকর থাকছে না।
তাই বিশ্বের সচেতন মানুষেরা এখন অরগানিক কৃষির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন, যেখানে কোনো প্রকার রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয় না। বিজ্ঞানীদের সর্বোচ্চ মনোযোগ এখন পরিবেশবান্ধব পেস্টিসাইড উদ্ভাবনের দিকে। এ রকমই একটি পরিবেশবান্ধব বায়োফানজিসাইড হলো ট্রাইকোডারমা নামের উপকারী ছত্রাক। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এ বায়োফানজিসাইডটি অরগানিক ফসল উৎপাদনে রোগ দমনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে পাইডার আকারে ট্রাইকোডারমা পাওয়া যায়, যা মাটিবাহিত রোগ দমনের জন্য সরাসরি মাটিতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও পানির সাথে মিশিয়ে ¯েপ্র করেও রোগ দমন করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ বায়োফানজিসাইডটি বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় করার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের দেশে এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হলেও নানাবিধ জটিলতার কারণে এখনো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন সম্ভব হয়নি ।
বায়োফানজিসাইড প্রকৃতি থেকে আহরিত একপ্র

কার উপকারী ছত্রাক, যা কৃষিজ উচ্ছিষ্টের ওপর সহজে জন্মানো যায়। এটি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি, ডাল ও অন্যান্য শস্যের গোড়া পচা রোগ ও ঢলে পড়া রোগ সহজেই দমন করা যায়। বীজ শোধনের মাধ্যমে যেকোনো ফসলের বীজবাহিত রোগ দমন করা যায়। এ ছাড়াও বায়োফানজিসাইড দ্বারা বীজ শোধনের মাধ্যমে মাটিতে যেসব রোগের জীবাণু থাকে, যা বপনের পরে বীজকে আক্রমণ করতে পারে সেগুলোও স্বার্থকভাবে দমন করা যায়। যার দরুন মাটিবাহিত রোগজীবাণু বীজকে আক্রমণ করতে পারে না।
এ বায়োপেস্টিসাইড ব্যবহার করলে পরিবেশের ওপর বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া পড়ে না। এটি সরাসরি মাটিতেও ব্যবহার করা যায়। মাটিতে ব্যবহার করলে মাটি শোধিত হয়। শস্যের রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু দমন হয়। এ ছাড়াও এ ধরনের পেস্টিসাইড ব্যবহারে মাটিতে বিদ্যমান উপকারী জীবাণুর তি হয় না এবং মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়। বায়ুবাহিত রোগ-জীবাণু দমনের জন্য এটি গাছেও ¯েপ্র করে প্রয়োগ করা যায়। জৈব সারের সাথে ব্যবহার করলে এটি অ্যাকটিভেটর হিসেবে কাজ করে। এই বায়ো ফানজিসাইড মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধিসহ তিকারক রোগের জীবাণু ধ্বংস করে। ছত্রাক ছাড়াও মাটিবাহিত নেমাটোড দমনেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বায়োফানজিসাইড ব্যবহারের উপকারিতা : পরিবেশবান্ধব এই পেস্টিসাইড সহজেই দেশীয় মেশিনে স্বল্প খরচে উৎপাদন সম্ভব। এটি কৃষি উচ্ছিষ্টের ওপর জন্মানো হয় বিধায় এর উৎপাদন খরচ একেবারেই অল্প, যা কৃষিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সম।
ট্রেনিং নিয়ে সহজেই নিজ বাড়িতে এই বায়োফানজিসাইড উৎপাদন করতে পারেন এবং ছয় মাস পর্যন্ত সংরণ করতে পারবেন। এটি ব্যবহার করা সহজ, পরিবেশসম্মত এবং ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যের ওপর কোনো ঝুঁকি নেই।
রাসায়নিক কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রত্য ও পরোভাবে মানবদেহের জন্য তিকর। এসব তিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকার দরুন কৃষকেরা নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মানব স্বাস্থ্য সংরণে অদূর ভবিষ্যতে এসব তিকর পেস্টিসাইড নিষিদ্ধ করা হতে পারে। এ ব্যাপারে উন্নত দেশগুলোয় নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে । সেসব দেশে বাণিজ্যিকভাবে ট্রাইকোডারমা উৎপাদন ও বিপণন করা হয়। স্বল্পব্যয়ী ও সহজলভ্য এ বায়োফানজিসাইড একবার মাটিতে প্রয়োগ করলে দীর্ঘ দিন ধরে কার্যকর থাকে। বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন যাবৎ এ বায়োফানজিসাইড নিয়ে গবেষণা হয়েছে। ফলাফলে দেখা যায় বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ট্রাইকোডারমা নামের বায়োফানজিসাইডটি অত্যন্ত কার্যকর। বাণিজ্যিকভাবে এ বায়োফানজিসাইডটি উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যে অনেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। মানব স্বাস্থ্য সুরায় পরিবেশবান্ধব এ বায়োফানজিসাইডটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও প্রসারের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন।
সহকারী অধ্যাপক, প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।