ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
কৃষি উদ্যোগ
ক্যাকটাস রোপন ও ব্যবস্থাপনা

ফনিমনসা আমাদের দেশে একটি পরিচিত নাম। আমাদের অনেকেই ক্যাকটাস বুঝেন না আসলে ফনিমনসাই এক ধরনের ক্যাকটাস। ক্যাকটাস নানা বর্ণের নানা বৈচিত্রের হয়ে থাকে। কোনটা অল্প কাঁটা, কোনোটা বেশি কাঁটা, এতে বিভিন্ন রংয়ের ফুল ফোটে।


সব ক্যাকটাস প্রচুর সূর্যালোক পছন্দ করে তবে সকালের সূর্যালোকই ক্যাকটাস এর জন্য বেশী ভালো, আর তাই সব ক্যাকটাসই কাঁচের বা পলিব্যাগের ছাউনীর নিচে চাষ করতে হয়। এদিকে ছায়াতে জন্মানো ক্যাকটাসে ফুল হয় না। আর প্রচুর পরিমাণে ভালো মানের ক্যাকটাস ফুল ও গাছ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত বাতাস দরকার, সেজন্য কাঁচের বা পলিব্যাগের ছাউনীর চারপাশে খোলা রাখতে হয়।

প্রয়োজনীয় পাত্র:-
পাস্টিকের পাত্র বা ধাতব থেকে মাটির পাত্রই ভালো ক্যাকটাস চাষের জন্য কারণ মাটির পাত্রে পানি ও বাতাস চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত অতি সুক্ষ্য সুক্ষ্য ছিদ্র থাকে। পাত্রকে পরিস্কার ও জীবাণু মুক্ত করে শুকিয়ে নিতে হবে চারা লাগানোর পূর্বে। সঠিক মাপের পাত্র নির্বাচনও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ বেশী বড় পাত্র অধিক পরিমাণে আর্দ্রতা ধরে রাখে যা ক্যাকটাস চারার জন্য খুবই ক্ষতিকর আর ছোট পাত্রে ক্যাকটাস চারা ঠিক মতো বাড়তে পারে না।।।

প্রয়োজনীয় মাটি ও জৈব সার:-
সঠিক পরিমাণ জৈব সার ও পানি ক্যাকটাস চাষের জন্য খুবই দরকারী। এই জৈব সারে যা যা থাকতে হবে
১ভাগ দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ + ১ভাগ পচা গোবর + ২ভাগ পচা পাতা+১ভাগ বালি + কিছু পরিমাণ ভাঙা হাড়ের গুড়া
জৈব সার তৈরীর পরপরই পাত্রে চারা রোপণ করা উচিত না, অন্তত ১৫দিন পর চারা রোপণ করা উচিত।

চারা রোপণের উপযুক্ত সময়
এটা বছরের যেকেনো সময় রোপণ করা যায় তবে মার্চ-এপ্রিল মাস বেশি উপযুক্ত সময়।

পাত্রে চারা রোপণের পদ্ধতি
পাত্রের নিচের এক তৃতীয়াংশ ইটের গুড়া দিয়ে পূর্ণ করতে হবে পানি চলাচলের জন্য, তারপর পাত্রের উপর থেকে ২সে.মি. ফাকা রেখে মাটি ও জৈব সারের মিশ্রণ দিয়ে পাত্রটি পূর্ণ করতে হবে। চারা রোপণের আগে চারার রোগ ও নেমাটোড আক্রান্ত মূল কেটে ফেলতে হবে। মূলের কাটা অংশ সালফার ডাস্ট দিয়ে ট্রিটমেন্ট করে নিতে হবে। মেলী বাগ ধ্বংস করার জন্য মিথ্যাইলেটেড স্পিরিট (৫-১০%) ও নিকোটিন(২.৫%) ব্যবহার করা যেতে পারে। চারা পাত্রের কিনারাই লাগালে বেশী ভালো হয় পাত্রের মাঝখানে লাগানোর চাইতে।

চারার পরিচর্যা 
পানি দেওয়া

সঠিক পরিমাণ পানি সময় মত দেওয়া খুবই দরকারী সঠিকভাবে ক্যাকটাস চাষের জন্য, বেশী পানি দেওয়া যেমন ক্ষতিকর তেমনি কম পানিও ক্যাকটাসের বৃদ্ধি ব্যহত করে, পানির পরিমাণ আর প্রয়োগ বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হয়। তাছাড়া এটা ক্যাকটাসের জাতের উপরও নির্ভর করে। ক্যাকটাসে শীতকালে পানি দেওয়ার দরকার হয় না। তবে যদি মূল শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভব্না থাকে তাহলে শীতকালে মাসে একবার পানি দিতে হবে।।।

খুটি দেওয়া
বেশীর ভাগ ক্যাকটাসে খুটি দেওয়ার দরকার হয় না, তবে যে সব ক্যাকটাস লতানো মতো হয় সেগুলোতে খুটি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে

বিভিন্ন ধরণের ক্যকটাস:


ফনিমনসা: এদের কান্ড পুরু, চ্যাপটা ও ডিম্বাকৃতি। একটির প্রান্ত হতে আরেকটি বের হয়। তীক্ষè কাঁটাযুক্ত কান্ডের গায়ে তারকাকারে সজ্জিত। অধিকাংশ ফনিমনসার বড় হলুদ বা লালচে বর্ণের ফুল হয়। ফনিমনসার অনেকগুলো জাত রয়েছে, যেমন-ডিলেনাই, ইলেটিওর, কেচিনেলিফেরা, ননাকান্থা বা মনকাটা নাইগ্রিকান্স প্রভৃতি।    


নিপল ক্যাকটাস: পশুর বাটের মতো ঠোঁট, বামনাকার, কান্ডের শীর্ষে গুচ্ছ গুচ্ছ চুলের মতো পাতা ও পাতার ফাঁকে ফুল হয়। ফুলগুলো হালকা হলুদ। এর সুদৃশ্য ফুলের ভিতরের দিক উজ্জ্বল হলুদ, বাইরের দিক লালচে। এর জাতগুলো যেমন কোয়াড্রস্পাইনা, এমপুশিলা, এম আটটা ইত্যাদি।   


মেলোক্যাকটাস: এ শ্রেণী দেখতে তরমুজ/ফুটির মতো। এদের মাথার শীর্ষ দেশ পশমী চুলের ন্যায় কাঁটায় আবৃত। এর জাতগুলোর মধ্যে পিরামিডাম, ডিপ্রেসাস, পলিক্যান্থাস, ম্যাক্সো ক্যান্থাস, গ্রেংগেলি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।   


সোরিয়াস: এই শ্রেণীর ক্যাকটাস শক্ত, দীর্ঘ, কান্ডযুক্ত ও কাঁটাওয়ালা। এগুলো ইট, পাটকেলের গুঁড়ো, পচা গোবর ও মাটির মিশ্রণে লাগানো হয়। এই ফুল সন্ধ্যার পর ফুটতে শুরু করে এবং মধ্য রাত্রি পর্যন্ত তা চলে। প্রায় ৬ ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত সাদা কেন্দ্র হলুদাভাব বেগুনী, বহির্দেশ সুগন্ধযুক্ত।   


হেকসাগোনাস: ছয় শিরা বিশিষ্ট। এতে বড় বড় ফুল ফোটে।   


ট্রাংকেনাম: এই জাত শীতকালে বৃহৎ দর্শনীয় ফুল দেয়। ফুলের রং গোলাপী। দিনের বেলায় ফুল ফোটে। গাছ দুর্বল স্বভাবের। তবে গাছের যেকোন অংশ মাটিতে পুঁতলে শিকড় বের হয় এবং পরে বড় ফুল ফোটে।  


রিপম্যালিস: এর অ™ভুদ ধরনের কান্ড। ছোট ছোট জোড়া লাগানো বলে মনে হয়। আবার অনেকগুলো তামাকের পাইপ জোড়া দেয়া মনে হতে পারে। ফুল ছোট হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। এটা পরগাছা উদ্ভিদ হিসেবে জন্মে।  


পেরেসকিয়া: এর সিংগল জাতে গোলাপের মত ফুল ফোটে। পেরেসকিয়া সারা বছর ফুল দেয়। এরকম অসংখ্য জাতের ক্যাকটাস রয়েছে।


কেমন মাটিতে ক্যাকটাস জন্মে
  ক্যাকটাস শুষ্ক মরু অঞ্চলের কংকরময় স্থানের উদ্ভিদ বলে বাগানে বা টবে চাষ করতে হলে মরুভূমি অঞ্চলের মাটির ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারনতঃ আলগা অথচ মাটি শুষ্ক আবহাওয়া ও অল্প পানি সেচে ক্যাকটাস ভালো জন্মে। 
টবের মাটি তৈরি করতে হবে- ভালো পচা কম্পোষ্ট তিন ভাগ, শুকনা গোবরের গুঁড়া এক ভাগ, দো-আঁশ মাটি এক ভাগ, চুনসুরকী এক ভাগ, মোটা সিলেট বালু ৬ ভাগ দিয়ে ক্যাকটাসের মাটি তৈরি করতে হবে এবং ফুলের জন্য সামান্য হাড়ের গুঁড়া দিতে পারেন।


কেমন দাম
ক্যাকটাসের জাতভেদে ৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা এমনকি এর চেয়ে বেশি দামের ক্যাকটাস রয়েছে।

কোথায় পাবেন
দেশের বিভিন্ন বিশ্বস্ত নার্সারীগুলো থেকে ক্যাকটাস কিনতে পারেন। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়, বিভিন্ন মেলা (যেমন বৃক্ষ মেলা) প্রভৃতি স্থান থেকে ক্যাকটাস কিনতে পারেন।

আয়-রোজগার
বর্তমানে ক্যাকটাসকে কেন্দ্র করে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কেউবা ক্যাকটাসকে দিয়ে বাড়তি আয় করে বা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পারেন। শিকড় থেকে ক্যাকটাসের চারা উৎপাদন করতে গ্রাফটিং জানা প্রয়োজন।


গ্রাফটিং
কাঁটা ছেঁড়ার প্রক্রিয়াকে গ্রাফটিং বলে। সহজ কথায় ‘জোড়কলম’ কে গ্রাফটিং বলা হয়। দুটি জাতের দু’টি সবল চারা প্রয়োজন। যে চারার উপর গ্রাফটিং করা হয় তাকে ‘রুট স্টক’ বলে। যাকে গ্রাফট করা হয় তাকে ‘সিয়ন’ বলে। সাধারণত লাল, হলুদ, কমলা, বহু বর্ণের ক্যাকটাস ‘সিয়ন’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জাপানে প্রথম ক্যাকটাসের গ্রাফটিং শুরু হয়। সবুজ কান্ডের উপর টুকটুকে লাল বা হলুদ কিংবা কয়েক রকমের বর্ণালী ছোট ছোট বল বসানো গ্রাফটিং করা ক্যাকটাস দেখতে অপরূপ নয়নাভিরাম। তাই এ ধরনের ক্যাকটাসের চাহিদা বেশি। দু’টি সুস্থ সবল চারা বাছাই করে প্রথমে পরিষ্কার করতে হবে। খুব ধারালো চাকু দিয়ে প্রথমে ‘রুটস্টক’ ক্যাকটাসটির মাথার দিকে প্রায় এক ইঞ্চি এক পোচে কাটতে হবে। এরপর ‘সিয়ন’ শিকড়ের দিক থেকে খানিকটা অংশ পূর্বের ন্যায় অর্থাৎ মাথার দিকে প্রায় এক ইঞ্চি কেটে ‘সিয়ন’ কে রুটস্টকের উপর বসিয়ে দিতে হবে। বসানোর সময় বা জোড়া দেয়ার সময় দু’টো অংশ মিলে ‘উল’ বা ‘রবার ব্যান্ড দিয়ে লম্বালম্বি বেঁধে পুরো একদিন অন্ধকারে রেখে দিতে হবে। আলোতে এনে ১০ থেকে ১৫ দিন রাখার পর রাবার ব্যান্ড খুলে দিতে হবে। পানি দিবেন তবে বেশি পানি দেয়ার দরকার নেই।