ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
কৃষি উদ্যোগ
কীটনাশক ছাড়াই অল্প সারে দ্বিগুণ সবজি উত্পাদন (বগুড়ায় ‘ট্রাইকোডার্মা’ বায়ো পেস্টিসাইডের পরীক্ষা)

ট্রাইকোডার্মা’ নামে নতুন এক ধরনের বায়োপেস্টিসাইড (জৈবিক বালাইনাশক) আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: বাহাদুর মিয়া। এটি ফসলে ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমে আসবে। উত্পাদন হবে দ্বিগুণ। এতে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হবে। গত জুন মাসে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ) ল্যাবরেটরীতে গবেষণার মাধ্যমে এটিকে কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। পরে ‘ট্রাইকোডার্মা’র পরীক্ষামূলক ব্যবহারে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে।
আরডিএ সূত্র জানায়, ‘ট্রাইকোডার্মা’ হচ্ছে মাটিতে মুক্তভাবে বসবাসকারী উপকারী ছত্রাক। যা উদ্ভিদের শিকরস্থ মাটি, পচা আবর্জনা, কম্পোষ্ট ইত্যাদিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি মাটিতে বসবাসকারী উদ্ভিদের ক্ষতিকর জীবাণু অর্থাত্ ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, নেমাটোডকে মেরে ফেলে। ট্রাইকোডার্মা প্রকৃতি থেকে আহরিত এমনই একটি অনুজীব যা জৈবিক পদ্ধতিতে উদ্ভিদের রোগ দমনের জন্য ব্যবহার করা হয়।

‘ট্রাইকোডার্মা’র ব্যবহার:এটি ট্রাইকো-সাসপেনশন, পাউডার এবং পেস্ট আকারে উত্পাদন সম্ভব। নিয়মানুযায়ী স্প্রে করলেই এর কার্যকারিতা পাওয়া যায়। পচা আবর্জনায় ট্রাইকো-সাসপেনশন এর জলীয় দ্রবণ মিশিয়ে দ্রুত সময়ে ট্রাইকো-কম্পোষ্ট উত্পাদন সম্ভব। এটি সহজলভ্য হওয়ায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না। বিষমুক্ত ফসল উত্পাদন সম্ভব হবে। বীজ শোধনে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। মাটিবাহিত উদ্ভিদের রোগ দমনে এটি সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ফসল উত্পাদনে সহায়তা করে। এটি ব্যবহারে জমিতে কোন ক্ষতিকর প্রভাব পরে না। মাটির উর্বরা শক্তিও বাড়ায়। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমায় ৪০-৬০%।

পরীক্ষামূলক প্রয়োগ:
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর গ্রামের হাফিজার রহমান, আব্দুল কুদ্দুস ও সোলায়মান এবছর তাদের শিম ক্ষেতে ট্রাইকোডার্মার পরীক্ষামূলক ব্যবহার করেছেন। তারা জানান, যেভাবে তাদের শিম বাগানে ফুল ফুটেছে তাতে করে তারা আশা করছেন এবার ফলন হবে আশাতীত। পোকামাকড়ের উপদ্রব নেই। ক্ষেতে কীটনাশক দেবার প্রয়োজনও হয়নি।
শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের কানুপুর গ্রামের কৃষক মাসুদ রানার বেগুন ক্ষেত, আবুল কালামের করলা ক্ষেতে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয় ট্রাইকোডার্মা। মাসুদ রানা বলেন, এটি ব্যবহারে ফলন দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিবার বর্ষায় বেগুন গাছের গোড়া পচে যেত। এবার কীটনাশক ছাড়াই আবাদ করেছি। রাসায়নিক সার নামমাত্র ছিটিয়েছি। একই গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, এটি বাজারে না পাওয়ায় আমরা চিন্তিত। করলা জমিতে ট্রাইকোডার্মা ছিটিয়ে ফলন বেশি পেয়েছি, এছাড়া কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়নি।

গবেষকের বক্তব্য:
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর কৃষি বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক ও ট্রাইকোডার্মা গবেষক একেএম জাকারিয়া বলেন, এদেশের কৃষি ব্যবস্থা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ১৫ হাজার মেট্রিক টন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় এদেশের মাটিতে। চোরাই পথে শত শত মেট্রিক টন কীটনাশক আসছে বিভিন্ন দেশে থেকে। যা পরিবেশের জন্য হুমকি। তাই কৃষিতে ট্রাইকোডার্মা ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। আরডিএ এটি বাজারজাত করতে উদ্যোক্তাদের সাথে মতবিনিময় এবং কৃষকদের উত্সাহিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান।

বিষমুক্ত সবজি চাষে নুর জাহানের সাফল্য

গাবতলী (বগুড়া) থেকে আল আমিন মন্ডল : বগুড়ার গাবতলী উপজেলাতে কৃষকরা কীটনাশক (বিষ) ছাড়াই উন্নতজাতের কুমড়া, বেগুন, পটলসহ সবজি চাষ করছে। ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কীটনাশক ছাড়াই সবজি চাষের প্রযুক্তি এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। বিষমুক্ত কুমড়া চাষ করেছেন উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের চকডমর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মিলুর স্ত্রী আদর্শ নারীকৃষক স্বাবলম্বী নুরজাহান বেগম। সে নিজের তত্ত্বাবধানে ২৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করেছে।544141_554239751294184_1281056294_n

আইপিএম স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আজ সে নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি এ মৌসুমে ১একর জমিতে কুমড়া ও সবজি চাষ করে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছে। ওপরে কুমড়া নিচে ধানের বীজ (বর্ষালী আঁউশ হাইব্রীড) বপন করেছে। কুমড়া চাষে সে জমিতে জৈবিক বালাই দমন ফাঁদ (সেক্স ফেরোম্যান ট্রাপ) ব্যবস্থাপনার জন্য ৫ফুট উচ্চতার ২টি বাঁশের খুঁটি, মাচা থেকে ২ ফুট উঁচুতে আড়াই শতক জমির জন্য ১টি করে বোতল (সাদা কৌটা) জমিতে দিয়ে রাখতে হয়। এই বোতলের মধ্যে সাবান বা হুইলের পানি রেখে দিতে হয়। সে পানির মধ্য স্ত্রী পোকার গন্ধ থাকে সেখানে ফসলের জন্য ক্ষতিকারক পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে লিওর গন্ধে আঘাত পেয়ে মারা যায়। বোতলের পানিগুলো ৫দিন পরপর পরিবর্তন করে দিতে হয়। এ পদ্ধতি ফসলের জন্য নিরাপদ। কীটনাশক প্রয়োগ না করে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। কুমড়া চাষের প্রধান শত্রু পোকা পাপকিং, বিটল পোকা মাকড়, জাব পোকাকে ধ্বংস করতে সেক্স ফেরোম্যান ট্রাপ কৃষকদের নিকট এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চকডমর আইপিএম কৃষক মাঠ-স্কুল ও কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ওই এলাকার আবুল, মমিন, কালাম, আমিনুর, শাহিন, বুলুসহ অনেকে এখন সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কৃষক স্কুলের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন জানান, আমরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে জমিতে বিষমুক্ত ফসল চাষ করছি। সফল নারী কৃষক নুরজাহান জানান, আমি নিজে ফসল ফলায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন আমি লাভবান হয়েছি। আইপিএম স্কুল আমাদের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, নেপালতলী ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক বিষমুক্ত সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সফল নারীকৃষক নুরজাহান এলাকার এখন উদাহরণ। গাবতলী উপজেলা কৃষি অফিসার স ম মেফতাহুল বারি জানান, গাবতলীতে সবজি চাষে কৃষকরা বেশি ঝুঁকে পড়েছে। এ মৌসুমে ফলন ও উৎপাদন ভাল হয়েছে। কৃষক লাভবান হবে।